তন্ত্র মতে তৈরি হয়েছিল হুগলির বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির
অনুপম স্থাপত্যের নিদর্শন বাঁশবেড়িয়ার এই হংসেশ্বরী মন্দির। ১৮০১-১৮১৪, মন্দির নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ১৩ বছর। রাজা নৃসিংহদেব ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হংসেশ্বরী কালীমন্দিরের নির্মাণ শুরু করান, নির্মাণকার্য চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হলে ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজার বিধবা পত্নী রাণী শঙ্করী মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করান। মন্দিরের গর্ভগৃহের উচ্চতা ৭০ ফুট। দেবীমূর্তি নীলবর্ণা, ত্রিনয়নী, চতুর্ভূজা, খড়্গধারিণী ও নরমুণ্ডধারিণী। এক অদ্বিতীয় গঠনে হংশেশ্বরী মন্দির, বাংলার পুরনো স্থাপত্বের নিদর্শনে একটা স্থান করে নিয়েছে। তান্ত্রিক মনস্ক মানুষের স্মৃতিতে মন্দির গড়ে উঠলেও তান্ত্রিকতার কোন প্রভাব এখানে নেই।
ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ রইল টইটইয়ের নবম পর্ব।
বাঁশবেড়িয়া(Banshberia)
হংসেশ্বরী মন্দিরের (Hanseswari Temple)অবস্থানের কারণে তীর্থস্থানের খ্যাতি পেয়েছে আজকের বাঁশবেড়িয়া। আগে এই জায়গা বংশবাটি হিসেবেই সবিশেষ পরিচিত ছিল। শোনা যায় হংসেশ্বরী মন্দির তৈরি হয়েছিল তন্ত্রমতে। মন্দিরের ৫টি তলা মানুষের দেহের ইড়া, পিঙ্গলা, বজ্রাক্ষ, সুষুম্না ও চিত্রিণী নাড়ির ইঙ্গিত বহন করছে। ২১ মিটার উঁচু এই মন্দিরের সহস্র পাপড়ির পাথুরে চূড়া তথা ১৩টি মিনার রূপ তার পদ্মের কুঁড়ির মতো। পাথরের শিবের নাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা সরু ডাঁটার পদ্মে আসীনা দেবী এখানে দক্ষিণাকালীর বীজ হংসেশ্বরী। নিম কাঠে তৈরি নীলরঙা চতুর্ভুজা। মন্দিরের নিচে থেকে উপরে ১৪টি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। বেলা ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে।
অনুপম স্থাপত্যের নিদর্শন বাঁশবেড়িয়ার এই হংসেশ্বরী মন্দির। ১৮০১-১৮১৪, মন্দির নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ১৩ বছর। রাজা নৃসিংহদেব ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হংসেশ্বরী কালীমন্দিরের নির্মাণ শুরু করান, নির্মাণকার্য চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হলে ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজার বিধবা পত্নী রাণী শঙ্করী মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করান। মন্দিরের গর্ভগৃহের উচ্চতা ৭০ ফুট। দেবীমূর্তি নীলবর্ণা, ত্রিনয়নী, চতুর্ভূজা, খড়্গধারিণী ও নরমুণ্ডধারিণী। এক অদ্বিতীয় গঠনে হংশেশ্বরী মন্দির, বাংলার পুরনো স্থাপত্বের নিদর্শনে একটা স্থান করে নিয়েছে। তান্ত্রিক মনস্ক মানুষের স্মৃতিতে মন্দির গড়ে উঠলেও তান্ত্রিকতার কোন প্রভাব এখানে নেই।হংসেশ্বরী মন্দিরের পাশেই আছে অনন্ত বাসুদেব মন্দির। এই মন্দির আরও পুরনো। ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামেশ্বর দত্ত এই চারচালা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। অজস্র সুন্দর টেরাকোটা কাজের নিদর্শন রয়েছে এই মন্দিরের গায়ে। প্যানেলগুলোর মধ্যে দেব-দেবীর মূর্তি, ভালবাসা ও যুদ্ধের দৃশ্য এবং তখনকার রোজকার জীবনের এক ঝলক দেখা যায়। পুরো মন্দির এলাকাটা ভারতের প্রত্নতাত্বিক বিভাগের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ট্রেনে চড়ে ব্যান্ডেল থেকে চার কিলোমিটার দূরের বাঁশবেড়িয়ায় আসা যায়। হাওড়া থেকে সোজাও আসতে পারেন। তবে ট্রেনের সংখ্যা কম। রাত্রিবাসের জন্য এখানে রয়েছে বাঁশবেড়িয়া পুরসভার অতিথিশালা।
সুখাড়িয়া(Sukharia)
কলকাতা ৮০ কিলোমিটার দূরে হুগলি জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হল সুখাড়িয়া। সকালে বেরিয়ে সারাদিন ঘোরাফেরা করে বাড়িতে ফিরে আসার পরিকল্পনা থাকলে আসতেই পারেন সুখাড়িয়া। হাওড়া থেকে ট্রেনে সোমড়াবাজার স্টেশনে নেমে ভ্যানরিকশা ধরে চলে আসুন এই ছোট্টগ্রাম সুখাড়িয়ায়। স্থাপত্য নিদর্শন তেমন কিছু নেই, রয়েছে টেরাকোটার অপূর্ব তিনটে মন্দির। এগুলির মধ্যে সব থেকে নজরকাড়া হল ১৮১৩ সালে তৎকালীন জমিদার বীরেশ্বর মিত্রমুস্তৌফির তৈরি আনন্দময়ী মন্দির। জমিদারিবাড়ি পেরিয়ে মন্দিরের অঙ্গন। মন্দিরের সামনে বিরাট উঠোন, পাশে সারি সারি শিবমন্দির। পাশেই টলটলে জলে পরিপূর্ণ দিঘি। স্থাপত্যে ও ভাস্কর্যে অতুলনীয় আনন্দময়ী মন্দির বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বারো চালার এই মন্দিরটির চাল তিনটি স্তরে রয়েছে। মোট ২৫টি শিখরের মধ্যে চার চালার প্রথম স্তরে ১২টি, দ্বিতীয় স্তরে ৮টি, তৃতীয় স্তরে ৪টি এবং মধ্যস্থলে বৃহত্তম রত্ন বা শিখর। মন্দিরের স্তম্ভ, খিলান, শীর্ষ ও বাইরের দেওয়ালে পোড়ামাটির অলঙ্করণ। কাছেই নিস্তারিণী কালীর পশ্চিমদুয়ারি নবরত্ন মন্দির ও হরসুন্দরী কালিকা মন্দির। শোনা যায় ভূমিকম্পে এই মন্দিরের কয়েকটি চুড়ো ভেঙে গেলে পরবর্তী বংশধরেরা সেগুলোর সংস্কার না করে সব চুড়ো ভেঙে সমান ছাদ করে দেন। সুখাড়িয়ার ঘাট থেকেই নৌকা করে যাওয়া যায় সবুজ দ্বীপে, গঙ্গার মাঝে জেগে ওঠা চরে এখন সবুজের রাজত্ব। শীতে নানা পরিযায়ী পাখিতে ভরে যায় গোটা সবুজ দ্বীপ।