Utpal Dutt Birthday: 'নাটক আমাকে দিয়েছিল সৃষ্টির আনন্দ, চলচ্চিত্র দিয়েছিল বেঁচে থাকার রসদ' জন্মদিনে শ্রদ্ধা উৎপল দত্তকে
উৎপল রঞ্জন দত্ত ((Utpal Dutt)), যদিও সকলে তাঁকে উৎপল দত্ত নামেই চেনে। বাংলা নাট্য জগতে প্রথম এবং প্রধান প্রাণপুরুষ। এর আগে বা পরে কেউ কখনও ছিলেন, না কেউ আসবেন! ১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশের (Bangladesh) বরিশাল জেলার কীর্তনখোলায় জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ১৯৪৫ সালে কলকাতায় পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন ১৯৪৫ সাল থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (2nd World War) আবহের মধ্যেই পড়াশুনা চালিয়ে যান বাংলা নাট্য জগতের এই প্রাণপুরুষ। তবে কলেজে পড়ার সময়ই শুরু করেন অভিনয়।
কলকাতা, ২৯ মার্চ: উৎপল রঞ্জন দত্ত ((Utpal Dutt)), যদিও সকলে তাঁকে উৎপল দত্ত নামেই চেনে। বাংলা নাট্য জগতে প্রথম এবং প্রধান প্রাণপুরুষ। এর আগে বা পরে কেউ কখনও ছিলেন, না কেউ আসবেন! ১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশের (Bangladesh) বরিশাল জেলার কীর্তনখোলায় জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ১৯৪৫ সালে কলকাতায় পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন ১৯৪৫ সাল থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (2nd World War) আবহের মধ্যেই পড়াশুনা চালিয়ে যান বাংলা নাট্য জগতের এই প্রাণপুরুষ। তবে কলেজে পড়ার সময়ই শুরু করেন অভিনয়।
শুরুর দিকে শেক্সপীয়ারের নাটক মঞ্চস্থ করতেন সাম্যবাদে বিশ্বাসী উৎপল দত্ত। 'সাম্যবাদী' ও 'বামপন্থায় বিশ্বাসী' উৎপল দত্তের নাট্যজীবন সুমধুর ছিল না। প্রতিবাদের স্বর দমিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার প্রশাসনের রক্তচক্ষুর শিকার হতে হয় উৎপল দত্তকে। ১৯৪৭ সালে 'দ্য অ্যামেচার শেক্সপেরীয়ানস' নামে প্রথম নাট্যগোষ্ঠী তৈরি করেন। এরপর কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হতে থাকে উৎপল দত্তের পরিচালনায়। ১৯৪৯ সালের ১৫ জুলাই জেভিয়ার্সের মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় শেক্সপীয়ারের জুলিয়াস সিজার। ওই নাটকে উৎপল দত্তের অভিনয় মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন জিয়োফ্রে কেন্ডাল।
এর ঠিক ১ বছর পর নিজের নাট্যগোষ্ঠীর নাম বদলে করেন লিটল থিয়েটার গ্রুপ। এই দলেই পরবর্তীকালে যোগ দেন রবি ঘোষ এবং সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত অভিনেতারা। উৎপল দত্তের পরিচালনায় 'কল্লোল' নাটকটি কলকাতায় হইচই ফেলে দেয়। এই নাটকের বিজ্ঞাপন ছাপতে অস্বীকার করে অমৃতবাজার পত্রিকা থেকে শুরু করে অন্যান্য পত্রিকাগুলি। ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উৎপল দত্তকে গ্রেফতার করা হয়। উৎপল দত্তের গ্রেফতারের পরই তীব্র সমালোচনায় মুখর হন অস্কারজয়ী সত্যজিত রায়, মন্মথ রায় এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবীরা। তাঁর মুক্তির দাবিতে কলকাতা ছাড়াও সারা ভারত জুড়ে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। বুদ্ধিজীবীদের চাপে পড়ে উৎপল দত্তকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
তাঁর মুক্তির পর ১৯৬৬-র ৭ মে ময়দানে আয়োজিত হয় কল্লোল বিজয়োৎসব। নাটক পরিচালনা এবং অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন উৎপল দত্ত। যদিও পরবর্তীকালে নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন তিনি। উৎপল দত্তের পরিচালনায় 'মানুষের অধিকার' কালজয়ী নাটকটি সেই সময়ের কমিউনিস্ট এবং নকশালপন্থীদের চরম বিদ্রোহের মুখে পড়ে। ভেঙে যায় তাঁর নাট্যগোষ্ঠী, এরপরই উৎপল দত্ত তৈরি করেন পিপলস লিটল থিয়েটার। ১৯৭১-র রবীন্দ্রসদনে প্রথম অভিনীত হয় এই নাট্যগোষ্টীর প্রথম নাটক টিনের তলোয়াড়।
বাংলার ইতিহাস যেন 'মঞ্চের ক্যানভাসে' তুলির ছটায় রঙ ছড়িয়েছিলেন উৎপল দত্ত। এরপর সূর্যশিকার, ব্যারিকেড, দু:স্বপ্নের নগরী; একের পর এক কালজয়ী নাটকের পরিচালনা এবং অভিনয় করেছিলেন উৎপল দত্ত। তিনি নিজে বলতেন 'নাটক বা যাত্রা আমাকে সৃষ্টির আনন্দ দিলেও, চলচ্চিত্র দিয়েছিল বেঁচে থাকার রসদ অর্থাৎ টাকা'। বাংলা, হিন্দি নাটক বা যাত্রার পাশাপাশি চলচ্চিত্র জগতে সমান পাল্লা দিয়ে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সত্যজিত রায় বলেছিলেন, 'উৎপল বাবু রাজি না হলে আমি হয়তো আগন্তুক সিনেমাটি বানাতামই না।' শুধু বাংলা সিনেমাই নয়, হিন্দিতেও বহু সিনেমাই কাজ করেছিলেন উৎপল দত্ত। মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়াকে ঠাট্টা করে বলতেন, '৬০ বছর বয়স হলে বিপ্লবী আর বিপ্লবী থাকে না, প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে যায়'। ১৯২৯ সালের ১৯ অগাস্ট মাত্র ৬৪ বছরেই জীবনাবাসন হয় কালজয়ী এই অভিনেতার।