Lok Sabha Elections 2024: তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণা করতেই বাংলার এই ১০ কেন্দ্রে লড়াই জমে গেল, দেখুন টক্করের দশারফার তালিকা
লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। যে কোনও দিন ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হবে। আগামী পাঁচ বছর দেশের সিংহাসনে কে বসেন তা ঠিক হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। যে কোনও দিন ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হবে। আগামী পাঁচ বছর দেশের সিংহাসনে কে বসেন তা ঠিক হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে। সবার নজরে বাংলার ৪২টি আসন। অনায়াসে দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরতে হলে বাংলা থেকে গতবারের মত চমকপ্রদ কিছু করতে হবে নরেন্দ্র মোদী-কে।
অন্যদিকে, দিদির কাছে আরও একবার নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ। ২০২১ বিধানসভায় মোদীকে হারিয়ে মমতা নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারে বড় সাফল্য পেয়েছিলেন। আবার ২০১৯ লোকসভায় রেকর্ড ১৮টা আসনে জিতে মোদী পেয়েছিলেন বাংলার মানুষের আর্শীবাদ।
ব্রিগেডের সভায় তৃণমূল রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করতেই খেলা জমে গিয়েছে। বিজেপি প্রথম দফায় বাংলার কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। এবার দেখা যাক বাংলার কোন কোন লোকসভা আসনে দারুণ লড়াই হতে চলেছে। আরও পড়ুন- জানুন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিস্তারিত---
১) দেব বনাম হিরণ (ঘাটাল): টলিউডের দুই তারকার লড়াই এবার ঘাটালে। এখান থেকে গত দুটি লোকসভায় অনায়াসে জিতে এসেছেন দেব। তাঁর কাজে মোটের ওপর খুশি এখানকার ভোটাররা। তবে দলে কোন্দল আছে। যে কারণে দেব ক দিন আগেই কিছু পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সরে যেতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ অবধি দিদির সঙ্গে কথা বলে খুশি হয়ে তৃণমূলে থেকে যান তিনি। এবার দেবকে লড়তে হবে খড়গপুরে বিজেপি বিধায়ক হিরণের সঙ্গে। দেবের মত টলিউডে সেভাবে জমি শক্ত করতে না পারলেও রাজনীতির ময়দানে সুনাম কুড়িয়েছেন হিরণ। বছর তিনেক আগে হওয়া খড়গপুর বিধানসভায় তৃণমূলের জেতা আসনে জেতেন হিরণ। এবার তাঁকে লড়তে হবে দেব-ভূমে। ২০১৪ লোকসভায় প্রথমবার প্রার্থী হয়ে দেব সিপিআইয়ের সন্তোষ রানা-কে ২ লক্ষ ৬০ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন দেব। পাঁচ বছর বাদে মোদী ঝড়ে মাঝেও বিজেপির ভারতী ঘোষকে লক্ষাধিক ভোটে হারান টলিউডের সুপারহিট হিরো।
তবে এবার দেবের লড়াই কঠিন। তবে ঘাটাল লোকসভার মধ্যে থাকা সাতটা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই ৬টা-তে লিড আছে তৃণমূলের। একমাত্র ঘাটাল বিধানসভায় হাজার খানেকের ভোটে জিতেছিল বিজেপি। কেশপুর, ডেবরা, সবং সহ বাকি ৬টা বিধানসভায় তৃণমূল জেতে। বক্স অফিসের দ্বৈরথে দেবকে কখনও টক্কর দিতে পারেননি হিরণ। ইভিএমের লড়াইয়ে পারবেন কি?
২) লকেট চট্টোপাধ্যায় বনাম রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (হুগলি): লকেটর গলা থেকে সাংসদ তকমা কাড়তে ময়দানে 'দিদি নম্বর ওয়ান'। হুগলিতে দিদির প্রার্থী 'দিদি নম্বর ওয়ান' রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। টিভিতে এক শোয়ের সৌজন্যে এখন জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকা রচনা রাজনীতির সঙ্গে তেমন যোগযোগ নেই। গত লোকসভায় হুগলি থেকে লকেট প্রায় ৭৩ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন সেই সময়ের সাংসদ রত্না দে নাগ-কে। লকেটের জয়ের পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল একটা বড় কারণ ছিল। হুগলি লোকসভার অন্তর্গত সাতটা বিধানসভা কেন্দ্রেই লিড আছে তৃণমূলের। ২০২১ বিধানসভায় প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে লকেট ১৯ হাজার ভোটে হেরেছিলেন চূঁচড়া থেকে।
৩) অধীর চৌধুরী বনাম ইউসুফ পাঠান (বহরমপুর): বাংলার রাজনীতিতে প্রায় সব কিছুই পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মসনদে বসা থেকে বঙ্গের সব প্রান্তে দলের সংগঠন দিতে পেরেছেন মমতা। কিন্তু দিদির না পাওয়ার জায়গা শুধু বহরমপুর লোকসভা। বামেরাও পারেননি, দিদিও পারেননি, বিজেপিও পারেনি। বহরমপুরের রবীনহুড অধীর চৌধুরী ১৯৯৯ থেকে ২৫ বছরে পাঁচটা লোকসভা ভোটে সসম্মানে জিতেছেন। বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর গত দুটো লোকসভা নির্বাচনে অধীরের বিরুদ্ধে মমতা প্রার্থী করেন গায়ক ইন্দ্রনীল সেন (২০১৪) ও অপূর্ব সরকার (২০১৯)-কে। ২০১৪ ভোটে অধীর ৫০ শতাংশের বেশী ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। আর ২০১৯ লোকসভায় জেতেন ৮০ হাজার ভোটে। এবার অধীরের বিরুদ্ধে স্থানীয় কাউকে বা কলকাতার কোনও সেলেব প্রার্থী নন, একেবারে তারকা ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান-কে প্রার্থী করলেন। অধীর গড়ে তৃণমূলের একমাত্র পজেটিভ থেকে এই লোকসভার ৬টি লোকসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের লিড আছে, আর বহরমপুর বিধানসভায় জিতেছে বিজেপি। তবে অধীরের নামটা ইভিএমে দেখলে সেখানকারের ভোটাররা বরাবরের মত এবারও হাতেই ভরসা দেখান কি না সেটাই দেখার।
৪) দিলীপ ঘোষ (সম্ভাব্য) বনাম জুন মালিয়া (মেদিনীপুর): ২০২১ বিধানসভায় মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে টলিউড অভিনেত্রী জুন মালিয়া-কে প্রার্থী করেন মমতা। কঠিন লড়াইয়ে দারুণভাবে জেতেন জুন। সেই জুনকে এবার সাংসদ হিসেবে দেখতে চেয়ে মেদিনীপুরে প্রার্থী করলেন। গতবার মেদিনীপুর লোকসভায় তৃণমূলের অভিজ্ঞ নেতা মানস ভুঁইয়া-কে প্রায় ৮৮ হাজার ভোটে হারিয়ে সাংসদ হন দিলীপ ঘোষ। এখনও ঘোষণা না হলেও এবারও দিলীপই বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন তা মোটের ওপর নিশ্চিত। জুনের পক্ষে ভাল খবর-একমাত্র খড়গপুর সদর ছাড়া এই লোকসভার সব বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়ক, আর অভিনেত্রীরা প্রার্থী হলে এখানে ভোটাররা ভোট দেন। ২০১৯ লোকসভায় মেদিনীপুর থেকে জিতে তৃণমূলের সাংসদ হয়েছিলেন সন্ধ্যা রায়। আর খারাপ খবর হল-দিলীপ ঘোষ কখনও ভোটে হারেন না এই পরিসংখ্যানটা, ২০১৯ লোকসভাতেও তৃণমূলের ৬টি-তে লিড ছিল।
৫) সৌমিত্র খাঁ বনাম সুজাতা মণ্ডল (বিষ্ণুপুর): প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী-র লড়াই। ২০১৪ লোকসভায় তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিষ্ণুপুরের সাংসদ হয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ। পরে দলের নেতাদের সঙ্গে মত বিরোধ হয়ে দল ছেড়ে একই কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে হারান। সৌমিত্র-র জয়ে সবচেয়ে বড় দিক ছিল-আইনি বাধা থাকায় তিনি এই কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। সৌমিত্র-র অবিশ্বাস্য জয়ে তাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁ-র বড় অবদান ছিল। সুজাতা নিজে প্রচুর পরিশ্রম করে সৌমিত্র-কে জিতিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরে দু জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সৌমিত্র-র প্রাক্তন সুজাতা মণ্ডল এরপর তৃণমূলে ফিরে বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়ান। হেরে গেলেও সুজাতা লড়াই করেন। সেই সুজাতাকে এবার তাঁর প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করলেন দিদি। দাদা বনাম বৌদি-র লড়াই এবার ৫০:৫০।
৬) সুকান্ত মজুমদার বনাম বিপ্লব মিত্র (বালুরঘাট): বালুরঘাট থেকে গত লোকসভায় অর্পিতা ঘোষকে ৩৩ হাজার ভোটে হারিয়ে প্রথমবার সাংসদ হয়েছিলেন বিজেপির সুকান্ত মজুমদার। পরে তিনি দিলীপ ঘোষের পরিবর্তে রাজ্য বিজেপির সিংহাসনে বসেন। বালুরঘাটে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় সমস্যা গোষ্ঠী কোন্দল। ২০১৯-এ হাতছাড়া হওয়া বালুরঘাট পুনরুদ্ধারে তাই সেখানকার দীর্ঘদিনের দলীয় সংগঠক তথা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র-কে প্রার্থী করলেন মমতা। ২০০৯ লোকসভায় পাঁচ ৫ হাজার ভোটে হেরে বালুরঘাট থেকে জিতে সাংসদ হওয়া হয়নি বিপ্লব মিত্র-র। এরপর গত দুটি লোকসভায় অর্পিতা ঘোষকে প্রার্থী করেন দিদি। যা নিয়ে বিপ্লবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সেটা মেনে নিতে না পেরে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। এবার বিপ্লবের হাতে ব্যাটন দিলেন মমতা। বালুরঘাট লোকসভায় ইটাহার, কাশমুন্ডি, কুমারগঞ্জ ও হরিরামপুর বিধানসভায় লিড আছে তৃণমূলের। অন্যদিকে, ২০২১ বিধানসভার নিরিখে বিজেপি এগিয়ে বালুরঘাট, তপন ও গঙ্গারামপুরে। হরিরামপুর বিধানসভায় ২২ হাজার ভোটে জিতেছিলেন বিপ্লব মিত্র।
৭) দিব্যেন্দু অধিকারী বনাম উত্তম বারিক (কাঁথি): জমজমাট লড়াই। অধিকারী সাম্রাজ্য ভাঙার দায়িত্ব পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক-কে দিয়েছেন দিদি। সেখানে কাঁথির দীর্ঘদিনের সাংসদ শিশির অধিকারীর জায়গায় তাঁর ছেলে তথা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী-কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ২০২১ বিধানসভার নিরিধে কাঁথি লোকসভার চারটি বিধানসভাতেই লিড আছে পদ্ম শিবিরের। শুধু চণ্ডিপুর, পটাশপুর আর রামনগরে লিড আছে তৃণমূলের।
৮) শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে দেবাংশু ভট্টচার্য (তমুলক)-
৯) প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম রথীন চক্রবর্তী (হাওড়া)-
১০) সুভাষ সরকার (মন্ত্রী) বনাম প্রদীপ চক্রবর্তী (বাঁকুড়া)-