একদা বর্গী আক্রমণেই ধ্বংস হয়ে যায় গড়পঞ্চকোট

একসময় এখানে পঞ্চকোট রাজাদের দারুণ রমরমা ছিল। কবি মাইেকল মধুসূদন দত্ত(Michael Madhusudan Dutta) এই পঞ্চকোট রাজাদের স্টেটম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রকৃতির মাঝে পাহাড় ঘেরা পঞ্চকোট রাজাদের গড় আজও রহস্যে মোড়া।

ছবিতে পঞ্চকোটের রাজাদের গড়(Photo credit: Wikimedia)

ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ টইটইয়ের ১৮ পর্বে রইল গড়পঞ্চকোটের ইতিহাস।

গড়পঞ্চকোট(Garhpanchkot)

পুরুলিয়া(Purulia) গিয়েছেন আর গড়পঞ্চকোট দেখেননি, এমন বাঙালির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে যা পর্যটন ব্যবসার উন্নতিতে সহায়ক বৈকি। একসময় এখানে পঞ্চকোট রাজাদের দারুণ রমরমা ছিল। কবি মাইেকল মধুসূদন দত্ত(Michael Madhusudan Dutta) এই পঞ্চকোট রাজাদের স্টেটম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। প্রকৃতির মাঝে পাহাড় ঘেরা পঞ্চকোট রাজাদের গড় আজও রহস্যে মোড়া। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী দেখতে হলে এখানে আসতেই হবে। কলকাতা থেকে ট্রেনে আসানসোল, সেখান থেকে ভাড়ার গাড়িতে চড়ে চলে আসুন গড়পঞ্চকোট।পঞ্চকোটের নিকটতম স্টেশন কুমারডুবি। স্টেশন থেকে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র ১০ কিলোমিটার, আসা যায় অটোয়। আসানসোল থেকে ৩১ কিলোমিটার, বাস মেলে। বাস থেকে নেমে অল্প হেঁটে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র।

পাহাড়ের গা ঘেঁষে পিচ রাস্তা। বাঁ দিকে পঞ্চকোট পাহাড় ক্রমশ মাথা তুলেছে। ডান দিকে ধানক্ষেত। পিচ রাস্তার শেষে আদিবাসী গাঁয়ের লাল মাটির পথ। সেই পথ ধরে, আদিবাসী ঘরসংসার ছুঁয়ে, তাদের উঠোন দিয়ে বনবাংলো ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এলে পৌঁছে যাবে এক বিশাল মাঠে। আছে একটি মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সামনেই জঙ্গলময় ৬৪৬ মিটার উঁচু গড়পঞ্চকোট পাহাড়। এখানেই ছিল গড়। তার চিহ্ন এখনও রয়েছে পাহাড়ের গায়ে সবুজের খাঁজে খাঁজে। চোখে পড়বে গড়ের ধ্বংসাবশেষ, ভাঙাচোরা পুরনো বাড়ি। পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে খননে টেরাকোটা, জোড়বাংলো, পাঁচ চুড়োর ৯টি মন্দির, গোপন কুটুরি, সুড়ঙ্গ ছাড়াও নানান অতীত আবিষ্কৃত হয়েছে।

১০ কিলোমিটার দূরের বনবাংলোটি পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, সঙ্গেই রয়েছে বনবাংলো। পঞ্চকোট বা পাঞ্চেত পাহাড়ের শীর্ষে ওঠার পায়ে চলা পথের পাশে ইট, কাঠ বা বাঁশের এই বাংলোটি মনোরম। একটা-দুটো রাত কাটানোর সুন্দর জায়গা। সামান্য দূরে ডিভিসির ১৫ গেটের পাঞ্চেত বাঁধ। ১৯৫৬ সালে দামোদর নদের উপর গড়া এই বাঁধ ১৩৪ ফুট উঁচু আর ২২১৫৫ ফুট দীর্ঘ এই বাঁধ থেকে গোধূলিতে সূর্যের পঞ্চকোট পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ার দৃশ্যটি সারা জীবনের সঞ্চয়। গোবাগ মোড় থেকে পাকা রাস্তা ধরে পাঞ্চেত জলাধারের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ৩ কিমি দূরে রাস্তার দক্ষিণে ও পঞ্চকোট পাহাড়ের পশ্চিম দিকে পাহাড় থেকে একটি জলধারা পড়ছে যার স্থানীয় নাম ‘হদহদি’। হদহদির ১০০ মিটার দূরে মূল রাস্তা থেকে একটি রাস্তা পাহাড়ের ভিতর ঢুকেছে। বহু কাল আগে তৈরি হওয়া পঞ্চকোট পাহাড়ের একটি চূড়ায় যাওয়ার রাস্তা কিছু বছর আগে বন দফতর সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেছিল। এক সময়ে গাড়ি যাতায়াতের প্রচেষ্টায় রাস্তাটি তৈরি হলেও দীর্ঘ দিনের অবহেলায় গাড়ি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। তবে ট্রেকিং-এর পক্ষে রাস্তাটি ভাল।