
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম কাজ হল দাঁত পরিষ্কার করা, যার জন্য ব্যবহার করা হয় টুথব্রাশ। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করলে শরীর সুস্থ ও সুন্দর হয়ে ওঠে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-৩৫০০ সালের দিকে মানুষ গাছের ডাল চিবিয়ে পরিষ্কার করা হত দাঁত। পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা শুরু হয় সুগন্ধি ডালপালা, এর ফলে দাঁত পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধ মুক্ত হত মুখ। এরপর প্রায় ৫২৬ বছর আগে ১৪৯৮ সালের ২৬ জুন প্রথম টুথব্রাশ তৈরি করেছিলেন চীনের শাসক হংঝি। এই টুথব্রাশ তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয় হাড়ের উপর শুকরের ঘাড়ের চুল। হংঝি পেটেন্ট করেছিলেন তার ব্রাশের। এরপরই প্রবণতা বেড়ে যায় এই বিশেষ টুথব্রাশের।
ধীরে ধীরে হাড়ের পরিবর্তে ব্যবহার করা শুরু হয় কাঠের হাতল। তবে তখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি টুথপেস্ট। টুথপেস্ট হিসেবে ব্যবহার করা হত কাদা, ছাই, ডিমের খোসার পেস্ট বা লবণ। ১৬৯০ সালে অ্যান্থনি উড নামে একজন ব্যক্তি তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন যে তিনি একজন ব্যক্তির কাছ থেকে একটি টুথব্রাশ কিনেছিলেন। কথিত আছে যে এই সময়েই প্রথমবার টুথব্রাশ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। টুথব্রাশের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার দেখে, ১৭৮০ সালে বড় আকারে টুথব্রাশ তৈরি করা শুরু করেন উইলিয়াম অ্যাডিস। কিন্তু শূকরের চুলের পরিবর্তে ঘোড়ার লেজ ব্যবহার করেন তিনি। জেলে থাকার উইলিয়াম অ্যাডিস দেখে ছিলেন সকলেই কাদা এবং কয়লা ছাই দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করছে, তাই জেল থেকে বের হওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে ব্রাশ তৈরি করেন তিনি।
উইলিয়াম অ্যাডিসে শুরু করা উইজডম টুথব্রাশ নামের কোম্পানিটি বর্তমান যুগেও চালু রয়েছে। ১৮৪৪ সালে, প্রথমবার একটি তিন-সারি টুথব্রাশ তৈরি করা হয়। বছরের পর বছর এই স্টাইলের ব্রাশ চলতে থাকার পর ১৯৩৫ সালে, ওয়ালেস ক্যারোথার্স একটি সুপার পলিমার তৈরি করেছিলেন, যার নাম নাইলন। এরপর পশুর দাঁতের পরিবর্তে টুথব্রাশে ব্যবহার শুরু হয় নাইলনের। ব্রাশের এই স্টাইলটি মানুষের খুব পছন্দ হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে তৈরি হতে থাকে ব্রাশের নতুন রূপ। ১৯৬০ এর দশকে বাজারে আসে বৈদ্যুতিক টুথব্রাশ। বর্তমান যুগে বিভিন্ন আকার, আকৃতি টুথব্রাশ পাওয়া যায়, এমনকি মেডিকেল ট্রিটমেন্ট ব্রাশও পাওয়া যায়।